শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ কিভাবে শুরু করবেন
পোষ্ট সূচিপত্র: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ কিভাবে শুরু করবেন
- শেয়ার বাজার কি
- শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ
- বিনিয়োগকারীর জন্যে দরকারী একাউন্ট
- বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নির্ধারণ
- বাজার গবেষণা
- শেয়ার বাজারে সঠিক শেয়ার নির্বাচনের কৌশল
- শেয়ার বাজার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন
- পোর্টফোলিও মনিটর করুন
- শেয়ারবাজারে অর্থনৈতিক প্রভাব
- শেয়ার বাজারের শেষকথা
শেয়ার বাজার কি
টাকা বা পুঁজি বিনিয়োগের একটি প্রধান মাধ্যম হলো শেয়ার বাজার, যা পুঁজি বাজার নামেও পরিচিত। শেয়ার হল একটি কোম্পানির মালিকানার অংশ। বাজার বলতে যেমন আমরা স্বাভাবিকভাবে কেনাবেচার স্থান বুঝি, শেয়ার বাজারও তেমন, যেখানে কোম্পানির মালিকানা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কেনাবেচা করা হয়।
শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে, যে কেউ একটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হতে পারেন। কোম্পানিগুলি তাদের আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে শেয়ার বিক্রি করে এবং শেয়ার ক্রয়কারী ব্যক্তিরাও মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যেই শেয়ার কেনেন।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, আপনার বিনিয়োগের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যগুলি পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শেয়ার বাজারের মৌলিক ধারণা এবং কার্যপ্রণালী সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে। এছাড়াও, বাজারের ঝুঁকি এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য।বাংলাদেশে বর্তমানে ২টি স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে:
- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ
শেয়ার বাজারে দুইভাবে বিনিয়োগ করা যায়। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে, দুই ধরনের মার্কেটের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা সম্ভব:
- প্রাইমারি মার্কেট:প্রাইমারি মার্কেট হল সেই স্থান যেখানে কোম্পানিগুলি প্রথমবারের মতো পাবলিক ইনভেস্টরদের কাছে তাদের শেয়ার ইস্যু করে। এই প্রক্রিয়াটি ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (IPO) নামে পরিচিত। IPO-এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলি তাদের মূলধন বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং বিনিয়োগকারীরা নতুন শেয়ার ক্রয় করে কোম্পানির আংশিক মালিক হয়ে যান।
- সেকেন্ডারি মার্কেট:সেকেন্ডারি মার্কেট হল সেই স্থান যেখানে বিনিয়োগকারীরা একে অপরের কাছ থেকে শেয়ার কেনা-বেচা করে। এই বাজারটি স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেমন ঢাকার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) বা নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE)। এখানে শেয়ারের দাম কোম্পানির পারফরমেন্স, বাজারের অবস্থান এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
বিনিয়োগকারীর জন্যে দরকারী একাউন্ট
- বিও (BO = Beneficiary Owner's) একাউন্ট:শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে প্রথমেই একজন ব্যক্তিকে বিও একাউন্ট খুলতে হবে। এই একাউন্টটি ব্রোকার হাউজে খুলতে হয়। ব্রোকার হাউজ হল লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, যারা শেয়ার বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কাজ করে।
- ডিম্যাট একাউন্ট:ডিম্যাট একাউন্টের মাধ্যমে শেয়ারের ইলেক্ট্রনিক কপি রাখা যায়। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি উভয় মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য ডিম্যাট একাউন্ট খোলা প্রয়োজন।
- একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকে একটি একাউন্ট থাকতে হবে, প্রবাসী বাংলাদেশের জন্য একটি এফসি বা এনআরবি একাউন্ট থাকতে হবে। একাউন্ট খোলার আবেদন পত্র মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনপত্র পূরণের জন্য আবেদনকারী এবং নমনীর ছবি, উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ব্যাংক চেক এর ছবি বা স্ক্যান কপি, যৌথ আবেদনকারী থাকলে তার ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্র কবি লাগবে।
বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নির্ধারণ
- দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়: আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদি একটি পুরোনো সঞ্চয় অর্থ বাড়ানোর জন্য অর্থ জমা করতে চান। এটি আপনার ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সুরক্ষিততা প্রদান করতে সাহায্য করতে পারে।
- অবসরকালীন পরিকল্পনা: যখন আপনি বৃদ্ধি হয়ে থাকবেন অথবা অবসর দেওয়া হবেন, তখন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ থেকে আপনি আপনার অবসরকালীন জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।
- ছোট মেয়াদে লাভ: আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে কিছু মেয়াদে মুনাফা অর্জন করতে চান। এটি মূলত ব্যক্তিগত লাভজনক উদ্দেশ্যে হতে পারে যেমন বিবাহিত বা শিক্ষার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।
- বিনিয়োগের প্রতিনিধিত্ব: আপনি একটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হিসাবে বিনিয়োগ করে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে চান। এটি সাধারণত ব্যবসার অংশ হিসাবে প্রদান করা হয়।
বাজার গবেষণা
শেয়ার বাজারে সঠিক শেয়ার নির্বাচনের কৌশল
শেয়ার বাজারে সঠিক শেয়ার নির্বাচনের জন্য কৌশল গুরুত্বপূর্ণ
এবং প্রভাবশালী হতে পারে।আপনি শেয়ার কিনছেন কেন? লক্ষ্য হতে
পারে মূল পুরোনো সঞ্চয় বৃদ্ধি, পেনশনের জন্য অর্থ সংগ্রহ, বা
লাভের জন্য ছোট মেয়াদে বিনিয়োগ ইত্যাদি।
ব্যবসা বোর্ড সেট
করুন, যাতে আপনি কি ধরণের শেয়ার আপনি খুঁজে পাচ্ছেন এবং কত সময়
ধরে আপনি বিনিয়োগ রেখে দিচ্ছেন।প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্ভাব্যতা
নির্ধারণ করুন। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য,
বিত্তীয় অবস্থা, ব্যবসায়িক রয়েনা এবং বিনিয়োগকে আত্মবিশ্বাস
দিতে সাহায্য করতে বাজার গবেষণা করুন।ব্যক্তিগত পছন্দ এবং শেয়ার
কানেকশনের অনুসারে শেয়ার পরিচিতি এবং মূল্য সম্পর্কে সঠিক
বিশ্লেষণ করুন।
মনিরাস রপ্তানি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ
যেখানে আপনি সঠিক সময়ে আপনার শেয়ার কেনা বা বিক্রি করতে
সহায়তা করবেন। এটি বাজারের সঠিক প্রতিক্রিয়াও দেয়, যাতে আপনি
নির্ধারিত লাভ হারে আপনার নিকটস্থ শেয়ার থাকতে পারেন।
শেয়ার বাজার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন
পোর্টফোলিও মনিটর করুন:
অনেক বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগের পোর্টফোলিও নিয়মিত যাচাই না
করার ভুল করে থাকেন। শেয়ার বাজার গতিশীল এবং এর অবস্থা ক্রমাগত
পরিবর্তন হয়ে চলেছে। সঠিক সময়ে এন্ট্রি এবং এক্সিট করার জন্য
নিয়মিতভাবে আপনার বিনিয়োগ ট্র্যাক করা গুরুত্বপূর্ণ।শেয়ার
বাজারের অবস্থান এবং শেয়ারের মূল্য ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে।
যদি
আপনি বাজারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত না থাকেন, তাহলে আপনি
আপনার বিনিয়োগের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।কোন
চরম পরিস্থিতির ক্ষেত্রে লোকসান প্রতিরোধ বা অন্ততপক্ষে কমানোর
জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন অপরিহার্য। বাজারের
নিম্নমুখী অবস্থায় সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন
হতে পারেন।
আরো পড়ুন:গর্ভাবস্থায় মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতা
তবে, প্রতিটি দামের বৃদ্ধি বা পতনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে মুনাফা অর্জনের জন্য ধৈর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে বাজারের অবস্থান এবংকোম্পানির সম্ভাবনা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
শেয়ারবাজারে অর্থনৈতিক প্রভাব
- প্রথমত, শেয়ার বাজার কোম্পানিগুলিকে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ দেয়, যা ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। যখন কোম্পানিগুলি শেয়ার ইস্যু করে, তারা বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে, যা অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরে প্রবাহিত হয় এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বাড়ায়।
- দ্বিতীয়ত, শেয়ার বাজার অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের একটি সূচক হিসেবে কাজ করে। বাজারের ওঠানামা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেয়। বাজারের উত্থান সাধারণত একটি শক্তিশালী অর্থনীতির সংকেত দেয়, যেখানে বাজারের পতন অর্থনৈতিক সমস্যা বা মন্দার ইঙ্গিত দেয়। এই তথ্য ব্যবহার করে সরকার এবং বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
- তৃতীয়ত, শেয়ার বাজার বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি তাত্ক্ষণিক নগদ প্রবাহের উৎস। বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে তাত্ক্ষণিক নগদ অর্থ পেতে পারেন, যা অর্থনীতির তরলতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক খরচ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
- চতুর্থত, শেয়ার বাজার উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে। নতুন ব্যবসা শুরু করতে বা বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে উদ্যোক্তারা শেয়ার বাজারের মাধ্যমে সহজেই মূলধন সংগ্রহ করতে পারেন। এটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক।
- পঞ্চমত, শেয়ার বাজার ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করে। যখন বাজার ভাল অবস্থায় থাকে, ভোক্তারা বেশি খরচ করতে এবং বিনিয়োগকারীরা বেশি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। এটি অর্থনীতির বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
মাইতানহিয়াত আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url