পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করার কার্যকরী কৌশল গুলো জেনে নিন
আজকের এই আর্টিকেলটি তে আমরা এমন কিছু কার্যকরী কৌশল শেয়ার করবো, যা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করতে সাহায্য করবে। প্রতিটি পরামর্শ প্রমাণিত এবং ব্যবহারিক, যা তোমার শিক্ষাজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করে নিজেকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করার কার্যকরী কৌশল গুলো জেনে নিন
- পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায়
- সারাদিন পড়াশোনা করার উপায়
- মনোযোগ বৃদ্ধির মেডিটেশন
- পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখার উপায়
- শিশুর মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়
- পড়াশোনায় মন বসানোর পাঁচটি উপায়
- লেখকের মন্তব্য
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায়
ইসলামে জ্ঞান অন্বেষণকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয় এবং একটি মহৎ কাজ বলে মনে করা হয়। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) শিক্ষার গুরুত্বের উপর একটি বড় জোর দিয়েছেন, এবং এটি বিশ্বাস করা হয় যে জ্ঞান অন্বেষণ একটি উপাসনা। অতএব, একজন মুসলিম হিসাবে, আপনার পড়াশোনায় শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রচেষ্টা করা এবং জ্ঞান অর্জনের দিকে আপনার মনোযোগ ও প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভূত করা গুরুত্বপূর্ণ।
কখনও কখনও আমাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে, যা মূলত বিভিন্ন দুশ্চিন্তা কিংবা অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে প্রথমে আমাদের উচিত, যে সব কারণে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে তা সেগুলিকে কিছু সময়ের জন্য পেছনে ফেলে দেওয়া। পড়ালেখার প্রতি একনিষ্ঠতা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, আল্লাহর কাছে নিজেকে সোপর্দ করে, উদ্বেগ মুক্ত হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারেন। এটি করার জন্য একটি বিশেষ দোয়া রয়েছে যা পড়াশোনার আগ্রহ পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়ক হতে পারে। নিচের দোয়া নিয়মিত পড়ুন:
দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে।
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ চিন্তাযুক্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন (বুখারী ২৮৯৩)। এই দোয়া নিয়মিত পাঠ করলে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ ফিরে আসবে এবং আপনার অগ্রগতি দ্রুততর হবে।
পড়াশোনায় সফলতার জন্য ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। পড়াশোনা শুরু করার আগে, কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করুন। আপনার অধ্যয়ন প্রক্রিয়া, বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং শেখার প্রক্রিয়া মজবুত করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে আদার রস পান করার উপকারিতা ও অপকারিতা
আল্লাহর রহমত ও নির্দেশনার মাধ্যমে আমরা সঠিক জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হই। তাই আমাদের উচিত, পড়াশোনার প্রতিটি ধাপে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং তাঁর দিকনির্দেশনা অনুসরণ করা। নামাজ ও দুআর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি নিজের অধ্যয়নকে আরও ফলপ্রসূ ও সফল করতে পারবেন।
সারাদিন পড়াশোনা করার উপায়
পড়াশোনা করার সময়কে আরও কার্যকরী ও উপভোগ্য করে তোলার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। এখানে সারাদিন পড়াশোনার জন্য কিছু প্রস্তাবনা:
- স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: প্রতিদিনের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করুন। এতে করে আপনার মনোযোগ থাকবে এবং প্রতিটি অধ্যায়ের জন্য লক্ষ্য পূরণ করার আকাঙ্ক্ষা থাকবে।
-
সময়সূচি তৈরি করুন: একটি সুসংগঠিত সময়সূচি তৈরি করুন যা পড়াশোনার সাথে অন্যান্য কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত করবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে পড়াশোনা করুন এবং বিরতির সময় নির্ধারণ করুন।
-
বিশ্রামের গুরুত্ব বুঝুন: দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা করা হয়তো কখনও কখনও ক্লান্তিকর হতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস বজায় রাখুন, যা আপনার মনোযোগ ও শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
-
বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করুন: একঘেয়ে পড়াশোনার পরিবর্তে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করুন যেমন: মাইন্ড ম্যাপিং, চার্ট ও গ্রাফ ব্যবহার করা, এবং আলোচনার মাধ্যমে শেখা। এতে করে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।
-
স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখুন: আপনার পড়াশোনার স্থানটি শান্ত ও মনোযোগী রাখুন। অতিরিক্ত গোলমাল ও বিভ্রান্তি থেকে দূরে থাকুন। একটি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে পড়াশোনা করা আপনার কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিবে।
-
প্রেরণাদায়ক অভ্যাস তৈরি করুন: প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা শুরু করুন এবং পড়াশোনার সময়ে প্রেরণাদায়ক কিছু করুন। প্রেরণার উৎস হিসেবে বই, ভিডিও, কিংবা গান ব্যবহার করুন।
-
দোয়া ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন: পড়াশোনার সময়ে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পড়াশোনা শুরু করার আগে দোয়া করুন এবং আল্লাহর কাছ থেকে সঠিক পথনির্দেশনা প্রার্থনা করুন।
-
ফলাফল পর্যালোচনা করুন: দিনে শেষে আপনার পড়াশোনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করুন। কোন বিষয়ে ভালো করেছেন এবং কোন বিষয়ে উন্নতি প্রয়োজন তা চিহ্নিত করুন।
প্রায়ই শোনা যায়, "মন বসে না পড়ার টেবিলে।" যখন কোনো কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে, কিন্তু মনোযোগ দিতে পারছেন না, তখন নিজের ওপর বিরক্তি লাগে। মাইক্রোসফটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের মনোযোগ কোনো কিছুতে ৮ সেকেন্ড স্থির থাকে। তবে, মনোযোগের এই স্থিরতার মাত্রা বাড়ানো সম্ভব।
অনেকেই মনোযোগ বাড়ানোর জন্য নির্জন কোনো জায়গায় যান। এটি ভালো অভ্যাস। কিন্তু মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ সঙ্গে থাকলে বিপত্তি ঘটে। পুরো দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে মনোযোগ বাড়ানোর কাজটি বাস্তবসম্মত হয় না। তাই সাধ্যের মধ্যে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে শুরু করুন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, যখন যে কাজটি করবেন, সব ভাবনা-চিন্তার মূলে তখন সেই কাজকে প্রাধান্য দিন। কাজটির গুরুত্ব ভাবুন, তবে মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না। বারবার যদি মনে করেন, মনোযোগ নেই, তা করবেন না। প্রয়োজন হলে ব্যায়াম করুন। শুরুতে ১৫ মিনিট, এরপর ধীরে ধীরে সেই সময় বাড়ান। মেডিটেশন করতে পারেন।
প্রযুক্তি ব্যবহার না করা: এটি সবচেয়ে কঠিন কাজ হলেও, মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি অত্যন্ত কার্যকরী। এক দিনে সম্ভব না হলেও, সপ্তাহখানেক সময় নিয়ে চেষ্টা করুন। মানুষ চাইলে সবকিছুই সম্ভব—এই বিশ্বাস মনে রাখুন, দেখবেন আপনি সফল হয়েছেন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: নিজেকে শান্ত ও স্থির রাখতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম খুব কার্যকর। পাঁচবার শ্বাস নিন ও ছেড়ে দিন। চোখ বন্ধ করে ভাবুন আপনার মনোযোগ আসবে।
নরম সুরের গান শোনা: অনেকে কিছু শুনতে শুনতে কাজ করতে পারেন না। তবে হালকা কোনো নরম সুরের মিউজিক শুনতে শুনতে আপনি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারবেন। সুন্দর সুর, গান মনকে ফুরফুরে করে এবং ক্লান্তি কমায়।
আরো পড়ুনঃ বাড়িতে ফলমূল ও শাকসবজি জীবাণুমুক্ত করার উপায়
কাজ থেকে বিরত থাকাঃ যদি কিছুতেই মনোযোগ না আসে, তাহলে কাজ থেকে হালকা বিরতি নিন। নিজের মতো করে সময় কাটান বা ভালো লাগে এমন কারো সঙ্গে গল্প করুন। অ্যারোমা থেরাপি নিতে পারেন বা মনোযোগ বাড়ানোর মেডিটেশন করতে পারেন।
রুটিন মাফিক কাজ করা: সব কাজ একসঙ্গে না করে প্রতিদিন অল্প অল্প করে কাজ করুন। এতে মস্তিষ্ককে চাপ কমবে এবং মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে। প্রতিদিনের কাজের তালিকা বা চেকলিস্ট তৈরি করুন। যতই মোবাইল বা গুগল ক্যালেন্ডার থাকুক, হাতের কাছে ডায়েরি রাখুন। এতে কাজ করা সহজ হবে।
পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখার উপায়
পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষেরই পড়াশোনা করতে মন চায় না। একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হয়। তবে, অনেকেই পড়লেও মনে রাখতে পারেন না বা দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ দিতে পারেন না। মনকে কেন্দ্রীভূত করা এবং দীর্ঘ সময় একনাগাড়ে পড়াশোনা করে নিঃসন্দেহে যে কেউ সফল হতে পারে। একজন সফল ছাত্র এবং একজন ব্যর্থ ছাত্রের মধ্যে মূল পার্থক্য এখানেই। আসুন, পড়াশোনায় দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখার কিছু বৈজ্ঞানিক উপায় সম্পর্কে জানি।
- ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে দূরে থাকুন: ইলেকট্রনিক ডিভাইস, বিশেষ করে মোবাইল ফোন, বর্তমানে পড়াশোনার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। গবেষণায় দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্ক খুব বিক্ষিপ্ত থাকে। ফেসবুক, রিলস ও ইউটিউব ব্যবহারকারীরা কোনো বিষয়ে বেশিক্ষণ মনোনিবেশ করতে পারেন না। তাই, পড়াশোনায় দীর্ঘ সময় মনোযোগ দিতে চাইলে ডিভাইস দূরে রেখে অফলাইনে থাকুন। মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ফ্রি না থাকলে দীর্ঘক্ষণ পড়াশোনা করা সম্ভব নয়।
- লক্ষ্য স্থির করা: একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ঠিক করুন এবং সে অনুযায়ী পড়ার পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজন হলে দীর্ঘ লক্ষ্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করুন। যেমন, আগামী ছয় মাস পর যদি কোনো পরীক্ষার তারিখ থাকে এবং লক্ষ্য থাকে পুরো সিলেবাস শেষ করা, তবে প্রথমেই সিলেবাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিন। প্রথম সপ্তাহে কোন কোন টপিক পড়বেন তা ঠিক করুন এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকুন। লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকলে পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।
- খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা: খাদ্যাভ্যাস একজন ছাত্রের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাঙ্ক ফুড ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার পরিহার করে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন। মৌসুমি ফল খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ শরীরে ক্লান্তি ও ঘুমঘুম ভাব সৃষ্টি করে। খাবার টেবিলের পাশে পানির বোতল রাখুন।
- প্রয়োজনীয় সবকিছু হাতের কাছে রাখা: পড়তে বসার আগে সব কাজ শেষ করে এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু পাশে রেখে পড়াশোনা করুন, যাতে বারবার উঠতে না হয়। যেমন, হঠাৎ করে মনে হলো আপনার নীল কলম নেই, তখন কলম সংগ্রহের জন্য উঠতে হবে না। এভাবে বারবার উঠলে পড়ায় বিঘ্ন ঘটে।
- পড়ার পরিবেশ তৈরি করা: দীর্ঘ সময় পড়ার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন। পড়ার স্থানটি কোলাহল মুক্ত ও জঞ্জাল মুক্ত হওয়া উচিত। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। পড়ার টেবিলটি গোছানো হলে পড়ায় মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও শারীরিক ব্যায়াম: দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকারি। অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের কারণে দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি হয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। শারীরিক ব্যায়ামও জরুরি। ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু হালকা এক্সারসাইজ দিনটিকে চনমনে রাখতে পারে। খেলাধুলা মানুষের মস্তিষ্ক চাঙা রাখে, যা পড়াশোনার জন্য খুবই দরকারি।
- টেবিলে বসার অভ্যাস করা: দীর্ঘ সময় পড়াশোনা করা একটি অভ্যাসের ব্যাপার। নতুন অভ্যাস রপ্ত করার জন্য টানা ২১ দিন সে অনুযায়ী চলতে হয়। প্রথমে পড়াশোনায় মনোযোগ না এলেও টেবিল ছেড়ে ওঠা যাবে না। বই বা পড়ার বিষয়বস্তু নিয়ে টেবিলেই বসে থাকুন। একসময় এটি অভ্যাসে পরিণত হবে এবং পড়ায় মনঃসংযোগ তৈরি হবে।
- প্রার্থনা ও মেডিটেশন: নিয়মিত সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করুন। মুসলিম হলে নামাজ পড়ুন, অন্য ধর্মের হলে নিজ নিজ উপায়ে প্রার্থনা করুন। ধ্যান করার কথাও অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন। প্রার্থনা মনকে প্রশান্ত করে এবং পড়াশোনায় সহায়ক হয়।
শিশুর মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়
পড়াশোনায় শিশুদের মনোযোগ টিকিয়ে রাখা আজকের দিনে মায়েদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুদের মন পড়াশোনার দিকে স্থির রাখা এবং দুষ্টুমি বা খেলার প্রতি তাদের প্রবণতা কমানো সহজ কাজ নয়। তবে কিছু কার্যকরী কৌশল অনুসরণ করে এই চ্যালেঞ্জটি সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব। আসুন, সেই কৌশলগুলো জেনে নিই যেগুলো মায়েদের সাহায্য করবে শিশুর মনোযোগ বাড়াতে।
শিশুকে গান শেখানো খুবই উপকারী হতে পারে। তবে যন্ত্রসঙ্গীত শেখালে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। পিয়ানো, সিন্থেসাইজার, তবলা বা মাউথ অর্গান শেখার মাধ্যমে শিশুর মনোযোগ বাড়ানো সম্ভব। সঙ্গীত শেখার সময় তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় থাকে, যা তাদের মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
শিশুকে পড়াশোনার জন্য কখনও জোর করবেন না। এতে তাদের মধ্যে বিরক্তি জন্মে এবং মনোযোগ কমে যায়। বরং খেলার ছলে শেখানোর চেষ্টা করুন। খেলতে খেলতে শেখা শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক হয় এবং তারা সহজেই বিষয়বস্তু গ্রহণ করে।
শোয়ার আগে শিশুর সঙ্গে কিছুটা সময় গল্প করুন। এতে শিশুদের মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং তারা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হয়। শিশুরা প্রশ্ন করলে উত্তর দিন এবং কখনও বিরক্ত হবেন না। এটি তাদের জানার আগ্রহ বাড়ায়।
দিনে অন্তত একটা ঘণ্টা শিশুকে ছুটাছুটি করতে দিন। এতে তার শরীর থেকে এনডরফিন হরমোন বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হবে। ফলে ঘামও ঝরবে । শরীর থেকে ঘাম ঝরার পর শিশুকে পড়াতে বসালে অনেকটা লাভ হয়। কারণ এনডরফিন হরমোন নিঃসরণের ফলে অন্তত এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা শিশুর মনোযোগ ঠিক থাকবে।
সন্তানের বয়স অনুযায়ী তার মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করুন। ৪ থেকে ৫ বছরের শিশুর যে মনোযোগ থাকবে ১০ বছরের শিশুর তার চেয়ে বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আপনার সন্তান ছোট হলে তার থেকে খুব বেশি মনোযোগ প্রত্যাশা করবেন না।
পড়াশোনায় মন বসানোর পাঁচটি উপায়
পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা অনেকের জন্যই চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে কিছু কার্যকর কৌশল মেনে চললে সহজেই এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা যায়। এখানে পড়াশোনায় মন বসানোর পাঁচটি উপায় তুলে ধরা হলো:
মুখস্থ নয়, বুঝে পড়োঃ ছোটবেলা থেকে আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিতে ছড়া, কবিতা ইত্যাদি দাঁড়িকমাসহ মুখস্থ করা অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। পরীক্ষার খাতায় হুবুহু লিখতে লিখতে আমরা মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠি। কিন্তু, এটি পড়াশোনার একটি ভুল পদ্ধতি। অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা বইয়ের সংজ্ঞা মুখস্থ করে গড়গড় করে বলতে পারেন, কিন্তু যখন ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, তখন একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যান।
শুধু কঠিন পরিশ্রম নয়, স্মার্ট স্টাডি করাও জরুরি। বর্তমান সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতিতে শুধুমাত্র মুখস্থ বিদ্যা নির্ভরতা তোমাকে ভালো ফল করতে সাহায্য করবে না। সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে ভাল ফল করতে হলে বিষয়বস্তুর গভীরে যেতে হবে এবং মূল ধারণা ভালোভাবে বুঝতে হবে।
লক্ষ্য নির্ধারণ করাঃবছরের শুরুতে আমরা সবাই বড় বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করি, “এই বছর ফাটিয়ে পড়াশোনা করবো!” কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের জন্য সেই লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়িত হয় না। কেন এমনটি হয়, তা কখনো ভেবে দেখেছো? আমাদের যখন বয়স কম ছিল, গুরুজনেরা আমাদের খাইয়ে পরিয়ে দিতেন, নিয়মিত পড়াশোনা করাতেন। এখন তুমি বড় হয়েছো, এখন আর কেউ প্রতিদিন তোমার পড়াশোনার খোঁজ নিতে আসে না। তোমার সাফল্য বা ব্যর্থতার দায়ভার এখন একান্তই তোমার নিজের হাতে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত ও বৃদ্ধির উপায়
মাইতানহিয়াত আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url