হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘরোয়া টোটকা গুলো জেনে নিন
আমরা এই পোষ্ট এ আরো জানতে চলেছি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘরোয়া টোটকা, হজম শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ, হজম শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম এই সম্পকে। তাহলে আমরা এখন হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘরোয়া টোটকা গুলো বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করবো।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ আপনাদের জানার বিষয় সমূহ
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘরোয়া টোটকা
- হজম শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ
- হজম শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম
- প্রাকৃতিক ভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
- লিভারের হজম শক্তি কমে গেলে কি হবে
- কি খেলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়
- হজমের সমস্যা দূর করার উপায়
- আমাদের শেষকথা
হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘরোয়া টোটকা
হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কারণে হজমের সমস্যা অনুভব করি, যেমন খাদ্যাভাসের অযত্ন, মানসিক চাপ বা স্বাস্থ্যগত সমস্যা। তবে কিছু সহজ ঘরোয়া টোটকা এবং অভ্যাস মেনে চললে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব। নিচে কিছু কার্যকর টোটকা আলোচনা করা হলো:
প্রতিদিন আদা ও লেবুর চা খেতে হবে কারণ আদা ও লেবুর চা হজমের জন্যে খুবই উপকারি। আদা আমাদের অন্ত্রের কাজকে উন্নত করে আর লেবুর সাইট্রিক এসিড হজম হতে সহায়তা করে কাজেই আমাদের প্রতিদিন আদা ও লেবুর চা খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা-অপকারিতা ও তার পুষ্টিগুণ
আমাদের অবশ্যই তাজা ফলের জুস যেমন কমলা, আপেল, তরমুজ এইসব ফলের সরবত খেতে হবে যা আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এতে ভিটামিন সি ও ফাইয়ার থেকে যা পাচন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে।
হজম শক্তি বাড়ানোর আরও একটি প্রধান উপাদান হল দই। দইতে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে টা খাদ্যর হজমে সহায়তা করে। তাই আমাদের নিয়ম করে দই খেতে হবে যাতে করে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পাই।
আমাদের প্রতিদিন বেশি করে পানি পান করতে হবে যাতে করে আমাদের হজমে কোন সমস্যা না হই। দেহের সঠিক হাইড্রেশন হজমের জন্যে খুবই জরুরি। প্রতিদিন বেশি বেশি পানি পান করলে আমাদের পেটের পাচন প্রক্রিয়া ভালো হই এবং হজমও ভালো হই।
জিরা, ধনিয়া, হলুদ এবং মিষ্টি এলাচ হজমের জন্য খুবই উপকারী। রান্নায় এই মশলাগুলি ব্যবহার করুন, এটি আপনার খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর সাথে সাথে হজম শক্তিও বৃদ্ধি করবে।
নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি করলে আমাদের শরীরের হজম শক্তি বেড়ে যাই যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। কাজেই আমাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপও হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম আপনাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
তাহলে আমরা অবশ্যই হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘরোয়া টোটকা গুলো ব্যবহার করবো যাতে করে আমাদের শরীর ও মন ভালো থাকে। আর অবশ্যই স্বাস্থ্যর যত্ন নিবো ও টোটকা গুলি প্রতিদিন মেনে চলবো।
হজম শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ
আমাদের দেহের হজম শক্তি বিভিন্ন কারণে কমে যেতে পারে। আমাদের শরীরে হজম শক্তি কমে গেলে অনেক ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, যা সময়মত সনাক্ত করা গেলে এই সমস্যার সমাধান করা যাই। আসুন জেনে নেই হজম শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলোঃ
পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যাঃ পেট ফাঁপা বা গ্যাস হজম শক্তি কমে যাওয়ার একটি বড় লক্ষণ। আপনি যদি নিয়মিত পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যাই ভুগেন তাহলে আপনার হজম শক্তি অনেক অংশে কমে যাবে। পাচন প্রক্রিয়া যদি সঠিক ভাবে না হই তাহলে পেটে গ্যাস জমা হই যা একটা বড় অসস্তির কারণ হয়ে দাড়াই।
বদহজমঃ বদহজম হজম শক্তি কমে যাওয়ার একটি পরিচিত লক্ষণ। যখন খাবার খাওয়ার পর পেট ভারী লাগে, বুক জ্বালায় বা অস্বস্তি অনুভূত হয়, তখন এটি বদহজমের সূচনা হতে পারে। খাবার সঠিকভাবে পরিপাক না হলে পেটে অস্বস্তি এবং অম্লভাব দেখা দেয়। বদহজমের ফলে খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়, যা কখনো কখনো ক্ষুধামন্দা বা খাবারের প্রতি অরুচি সৃষ্টি করতে পারে। যদি এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি হজম শক্তির আরও অবনতি ঘটাতে পারে। এছাড়াও, বদহজমের কারণে পেটের যন্ত্রণা এবং গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বার বার ডায়রিয়াঃ হজম শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলির মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বার বার ডায়রিয়া হওয়া। এই পরিস্থিতিতে, পাচন প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করে না এবং অন্ত্রে খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না। ফলে, দেহ থেকে পানি ও গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি বেরিয়ে যায়, যা শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে। বার বার ডায়রিয়া হলে আপনার শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে পারে না, যার ফলে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। এই অবস্থার কারণে শক্তি কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কোষ্ঠকাঠিন্য হজম শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি। এই অবস্থায় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না, এবং মলত্যাগে কষ্ট হয়। পাচন প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ না করলে অন্ত্রে খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না, যার ফলে মল কঠিন ও শুষ্ক হয়ে যায়। এতে পেটের অস্বস্তি এবং ফাঁপা ভাব দেখা দেয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হলে খাদ্যাভাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে।
ওজন কমে যাওয়াঃ হজম শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলির মধ্যে আরও একটি কারণ হচ্ছে ওজন কমে যাওয়া। হতে পারে। যখন আপনার দেহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন ওজন দ্রুত কমতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে, আপনার খাবার ঠিকমতো পরিপাক হয় না এবং দেহের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি ও পুষ্টি উপাদানগুলো অভাবে থাকে। ফলে শরীরে দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভূত হয়। ওজন কমে যাওয়া দীর্ঘমেয়াদে আপনার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিভিন্ন পুষ্টিগত ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে।
ক্লান্তি ও দুর্বলতাঃ ক্লান্তি ও দুর্বলতা হজম শক্তি কমে যাওয়ার একটি স্পষ্ট লক্ষণ। যখন হজম প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করে না, তখন আপনার শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি শোষণ করতে পারে না। এর ফলে আপনি সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে দুর্বলতা আসতে পারে। সঠিক পুষ্টি না পাওয়ায় শরীরের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং আপনি সহজেই অবসন্ন হয়ে পড়েন। এটি দীর্ঘমেয়াদে আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
হজম শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণগুলি সময়মতো শনাক্ত করা জরুরি। যদি আপনি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং খাদ্যাভাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন। আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।
হজম শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে নানা ব্যস্ততার মধ্যে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার অভাব হজম শক্তি কমিয়ে দেয়। হজম শক্তি ভালো রাখতে হলে শুধু পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই নয়, নিয়মিত ব্যায়াম করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমকে সক্রিয় করে, অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। এখানে হজম শক্তি বৃদ্ধির যাবতীয় ব্যায়াম আলোচনা করা হলঃ
- হাঁটা আমাদের জীবনের সাথে অতপ্রত ভাবে জড়িত। আমাদের প্রতিদিন বিভিন্ন কাজ করার জন্যে অনেক সময় ধরে হাঁটতে হই কিন্তু শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য অবশ্যই খাওয়ার পরে নিয়ম করে হাঁটতে হবে। আমাদের প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট খাওয়ার পরে হাঁটতে হবে তাহলে আমাদের আর হজমের কোন সমস্যা থাকবে না। কাজেই আমাদের একটা রুটিন করে নিতে হবে যে আমরা প্রতিদিন এই নির্দিষ্ট সময় হাঁটবো যাতে করে আমাদের শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি পাই।
- যোগব্যায়াম হল এমন একটি প্রাচীন শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে না, বরং মনকেও প্রশান্তি দেয়। হজম শক্তি বৃদ্ধির করার জন্য যোগব্যায়াম আমাদের জন্যে অনেক জরুরি। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে পেটের পেশী এবং অন্ত্রের কাজ ভালো হই, যা খাবার পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ করে। পবনমুক্তাসন, ভুজঙ্গাসন, এবং অধোমুখ শ্বানাসন এই যোগাসনগুলো হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। যোগব্যায়াম সহজেই ঘরে বসে করা যায়, তাই এটি আপনার দৈনন্দিন রুটিনের অংশ করে নিন।
- সাইক্লিং বা সাইকেল চালানো একটি স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সাইকেল চালানো সুধু আমাদের পায়ের পেশীকে শক্তিশালী করে না বরং পেটের পেশীকেও সক্রিয় করে যা খাবার পরিপাক প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে। নিয়মিত সাইকেল চালালে অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাই হজম তারাতারি হই। আমরা যদি প্রতিদিন ৪৫ মিনিট সাইকেল চালাই তবে এটি আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে দেই এবং শরীরকে আরও সুস্থ ও সবল করে তুলে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে আমাদের সাইকেল চালাতে হবে।
- সিট-আপস একটি সহজ ও কার্যকর ব্যায়াম যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই ব্যায়াম আমাদের পেটের পেশীকে বেশি বেশি কাজ করতে উৎসাহিত করে যার ফলে আমাদের হজম সহজেই হয়ে যাই। প্রতিদিন নিয়মিত সিট-আপস করলে আমাদের পেশী শক্তিশালী হই এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাই। আমরা যদি প্রতিদিন কয়েক মিনিট সিট-আপস করি তাহলে এটি আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে দিবে এবং শরীরকে আরও সুস্থ ও সবল রাখবে।
প্রাকৃতিক ভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
আমরা দেহে শক্তি বাড়ানোর জন্যে খাদ্য গ্রহণ করি কিন্তু সে খাবার যদি হজমই না হই তাহলে সে খাবার খেলে আমাদের দেহে রোগব্যাধি তৈরি হবে। আবার আমরা যে খাবার খাবো সেই খাবার হজম হওয়ার জন্যে পাকস্থলিতে প্রয়োজনীয় শক্তি থাকতে হবে। প্রাকৃতিক ভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধির উপাই গুলো এখানে আলোচনা করা হলঃ
সুষম খাবার গ্রহনঃ আমাদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্যই প্রধান। আমরা জীবিকা নির্বাহের জন্য খাবার খাই, কিন্তু যেকোনো খাবার খেতে পারি না। হজম শক্তি বৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের সবসময় উপকারি খাবার খেতে হবে। সুস্বাস্থ্য এবং হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য আমাদের গ্রহণীয় খাবার হতে হবে ভেজালমুক্ত এবং সুষম। সুষম খাবার বলতে এমন খাবার বোঝায়, যাতে খাদ্যের ছয়টি মৌলিক উপাদান বিদ্যমান থাকে। সুষম খাবার পাকস্থলিতে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং দেহের অভ্যন্তরীণ জৈবিক প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সহায়তা করে।
পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করাঃ আমাদের শরীর পানি দিয়ে পরিপূর্ণ। আমাদের শরীরের যাবতীয় কাজকর্ম সচল রাখতে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের সুস্থ থাকার জন্যে প্রতিদিন ১.৫--২ লিটার পানি পান করা উচিত। দেহে পানির সল্পতা হলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমে সমস্যা হই। আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে প্রতিদিন নিয়মিত পানি পান করতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ নিয়মিত ব্যায়াম বা অনুশীলন হজম শক্তি বাড়ানোর অন্যতম সেরা উপাই। খাওয়ার পড়ে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের পেশিগুলো সচল হই এবং খাবার হজমে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে অনেক রোগের লক্ষণ হ্রাস পায়। ব্যায়াম আমাদের হজম বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই সুস্থ ও সবল জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেতে হবেঃ গভীর রাতে খাওয়ার ফলে বদহজম হতে পারে, কারণ খাবার হজমের জন্য নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। রাতে দেরিতে খেয়ে ঘুমাতে গেলে খাবার হজমের সময় পায় না, কারণ ঘুমের সময় দেহের জৈবিক ক্রিয়াগুলো কম সক্রিয় থাকে। তাই, রাতের খাবার ঘুমানোর দুই ঘন্টা আগে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করতে হবে। এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করবে এবং বদহজমের সমস্যা কমাতে সহায়তা করবে।
মানসিক চাপ মুক্ত থাকাঃ মানসিক চাপ আমাদের হজম শক্তিকে খুবই প্রভাবিত করতে পারে। আমরা লক্ষ্য করলে দেখবো, বড় কোনো ঘটনা বা পরীক্ষার আগে আমাদের পেটে অস্থিরতা কাজ করে। শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের উন্নতি অনেকটাই আমাদের মনের উপর নির্ভর করে। মানসিক চাপ থাকলে ঠিকমতো ঘুম হয় না এবং খাওয়াও কম হয়, যা স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই, সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিজেকে যতটা সম্ভব মানসিক চাপ মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। প্রচন্ড মানসিক চাপে পড়লে করণীয় কাজগুলো করুন, এতে মন প্রশান্ত হবে এবং শরীরও সুস্থ থাকবে।
দেহের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহনঃ আমরা যখন ক্ষুধা অনুভব করবো, তখনই খাবার গ্রহণ করবো এবং পেট ভরে গেলে খাওয়া বন্ধ করবো। অতিরিক্ত ক্ষুধা বা পেট ভরার পরও খাওয়া বদহজম, গ্যাস জমা, ও পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত কম খাওয়া বা অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে হজম শক্তি কমে যায়। তাই, খাবার সহজে হজমের জন্য প্রয়োজন মতো খাবার খাওয়াই উত্তম। নিজের দেহের সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দিন এবং সেই অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করবো। এতে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে এবং আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
সবশেষে বলা যাই যে, বদহজম থেকে ছাড়া পেতে হলে উপরে লিখা উপায় গুলো অনুসরন করতে হবে ও প্রতিদিন রুটিন মেনে চলতে হবে।
লিভারের হজম শক্তি কমে গেলে কি হবে
মানুষ সাধারণত পুষ্টির জন্য খাবার গ্রহণ করে, কিন্তু যদি সেই খাবারটি হজম না হয় তাহলে পুষ্টি পাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। হজম শক্তি কমে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টির ঘাটতি, ভিটামিনের অভাব, ফোলা ভাব, গ্যাস, এবং জন্ডিস ইত্যাদি। নিচে হজম শক্তি কমে যাওয়ার ফলে যে সকল সমস্যা সৃষ্টি হয়, তা আলোচনা করা হলো:
- যদি লিভার সঠিকভাবে কাজ না করে তবে জন্ডিস রক্তে বিলিরুবিন তৈরি করতে পারে, যার ফলে ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যায়। হজম শক্তি কমে গেলে এই জন্ডিস নামক রোগটি দেখা দিতে পারে।
-
হজম শক্তি কমে গেলে শরীর ঠিকমতো পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে না। এর ফলে শরীরে পুষ্টি ও ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যা অপুষ্টির লক্ষণ।
-
হজমের সমস্যা পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে খাবারের চলাচলকে বিঘ্নিত করে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়।
-
হজমে ব্যাঘাত ঘটার ফলে খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না, যা ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এটি অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
-
হজম শক্তি কমে গেলে পেটে ফোলা ভাব এবং ব্যথা হতে পারে। এটি লিভারের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার ফলে ঘটে।
-
যকৃত পর্যাপ্ত পরিমাণে পিত্ত উৎপাদন করতে না পারলে পিত্ত পাথর গঠনের সম্ভাবনা থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
-
সঠিকভাবে খাবার হজম না হলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি চর্বি হিসাবে জমা হয়, ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
- লিভার সঠিকভাবে কাজ না করলে মিয়োসিস এবং লিভার ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
এখানে লিভারের যাবতীয় সমস্যা তুলে ধরা হল আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এই সমস্যা গুলো যেন কখনও আমাদের শরীরের সাথে না ঘটে। হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের এই সমস্যা গুলো দূর করতে হবে।
কি খেলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়
আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। কিছু খাবার ও অভ্যাস আছে যা হজম হতে খুব তাড়াতাড়ি সাহায্য করে। নিচে এমন কিছু খাবার ও টিপস দেয়া হলো যা খাবার তাড়াতাড়ি হজম করতে সহায়ক:
- আদা হজমের জন্য খুবই উপকারী। এটি পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করে এবং গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা কমায়। আপনি চায়ের সাথে আদা যোগ করে খেতে পারেন বা কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন।
-
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়। খাওয়ার আগে ও পরে এক গ্লাস পানি পান করলে খাবার সহজে হজম হয়।
-
পেঁপেতে থাকা প্যাপেইন নামক এনজাইম হজমে সহায়ক। এটি প্রোটিন হজম করতে সাহায্য করে এবং পেটের সমস্যা কমায়।
-
দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। প্রতিদিন এক বাটি দই খেলে হজম ভালো থাকে।
-
লেবুর রস হজম রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে হজমে সহায়তা করে। এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে সকালে খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়।
-
ফাইবার হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শাকসবজি, ফলমূল, এবং দানা শস্য খাবারের মধ্যে ফাইবারের ভালো উৎস।
-
ভারী ও তৈলাক্ত খাবারের পরিবর্তে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খান। এটি হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। তাজা ফল ও সবজি খাবারের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক এনজাইম হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
-
অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত এই ধরনের খাবার হজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে, তাই যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
-
নিয়মিত ব্যায়াম হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে।
এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হবে এবং হজমজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সুস্থ হজম প্রক্রিয়া বজায় রাখতে এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলুন।
হজমের সমস্যা দূর করার উপায়
বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গ্যাসের ওষুধ। পেটে কোনো সমস্যা হলেই আমরা পাশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাই। কিন্তু কখনও কী ভেবে দেখেছেন, আপনার ঘরেই আছে হজমের সমস্যা দূর করার উপায়? আসুন, দীর্ঘদিনের পুরনো হজমের সমস্যা নিমিষে দূর করার সাতটি ঘরোয়া উপায় জেনে নিই:
- আপেল: হজমের সমস্যা দূর করতে আপেল একটি বড় দাওয়াই। আপেল সিদ্ধ করে সেই রস খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। খালি পেটে নিয়মিত খেলে বদহজম দূর হয়।
-
কাঁচা হলুদ: কাঁচা হলুদ হজমের সমস্যার কার্যকর সমাধান। এক টুকরো কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেলে তা আপনাকে তাত্ক্ষণিক স্বস্তি দেবে।
-
উষ্ণ পানি: খালি পেটে উষ্ণ গরম পানি পান করলে হজমের সমস্যা কমে। এটি পেটের ফাপা ভাব দূর করতেও সহায়ক।
-
জিরার গুঁড়ো: জিরার গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে গরম করে খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। এটি পেটের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।
-
এলাচ: নিয়মিত এলাচ চিবিয়ে খেলে হজমের ক্ষমতা বাড়ে এবং পেটের আরাম দেয়।
-
খাবারের সময় ব্যবধান: খাবারের মাঝে বেশি সময় বিরতি না দিয়ে সমান দূরত্বে খাওয়া উচিত। দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখলে গ্যাসের সমস্যা বাড়ে।
-
পেঁপে পাতা: পেঁপে পাতা হজমের ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে পাতা সিদ্ধ করে পানি পান করলে হজমের সমস্যা কমে।
এই সহজ এবং কার্যকর উপায়গুলো অনুসরণ করলে হজমের সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায় এবং সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব।
আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আশা করি আমাদের পোস্টটি সম্পূর্ণ ভালভাবে পড়েছেন। আজকের এই পোষ্ট এ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘরোয়া টোটকা, হজম বৃদ্ধি করার ব্যায়াম, হজম শক্তি কমে গেলে কি হবে এই যাবতীয় বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তারপর ও আরও ভালভাবে এই বিষয়ে জানার জন্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
আজকের পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন কেননা আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত তথ্য ও জ্ঞানমূলক পোষ্ট করে।সর্বশেষ এ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘরোয়া টোটকা পোস্টটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
মাইতানহিয়াত আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url