কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা-অপকারিতা ও তার পুষ্টিগুণ

প্রিয় পাঠকবৃন্দ,কাঁচা কলা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব সাধারণ একটি ফল হলেও এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। এই প্রবন্ধে আমরা কাঁচা কলার উপকারিতা, অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

আজকের আলোচনায় আমরা কাঁচা কলার উপকারিতা,অপকারিতা ও বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব, যা আপনাকে এই ফলটির মূল্য এবং গুরুত্ব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে অবহিত করবে।

পোষ্ট সূচিপত্রঃকাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা-অপকারিতা ও তার পুষ্টিগুণ

কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও গুনাগুন

কাঁচা কলা আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে সহায়ক। এতে প্রচুর ফাইবার ও প্রতিরোধী স্টার্চ থাকে যা পেটের সমস্যা দূর করে। ওজন কমাতে কাঁচা কলা কার্যকর, কারণ এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিসের রোগীরা সুগার নিয়ন্ত্রণে কাঁচা কলা খেতে পারেন। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য ও অর্শ্বরোগ প্রতিরোধে এটি সহায়ক। 

কাঁচা কলা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। ত্বকের বলিরেখা কমাতে ও ব্রণ প্রতিরোধে কাঁচা কলা উপকারী। চুলের যত্নেও কাঁচা কলা ভালো, এটি চুলকে নরম ও পুষ্ট রাখে। আসুন, কলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ  উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নিইঃ

আরো পড়ুনঃ নিমপাতার স্বাস্থ্যগুণ - ত্বক ও চুলের সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক পদ্ধতি

ক্ষুধা এবং ওজন কমাতে কাঁচা কলাঃ কাঁচা কলা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। এতে থাকা ফাইবার ধীরে হজম হয়, ফলে পেট দীর্ঘ সময় ভরা থাকে। এতে ক্ষুধা কম অনুভূত হয় এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। তবে, ওজন কমাতে কেবল কাঁচা কলা খাওয়া যথেষ্ট নয়; নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্যও প্রয়োজন।

সুস্থ হার্টের জন্যঃ কাঁচা কলা কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে থাকা ফাইবার হার্টের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার প্রতিরোধে সহায়ক।

ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ কাঁচা কলাতে থাকা প্রতিরোধী স্টার্চ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। NCBI-তে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, কাঁচা কলা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।

হাড় শক্ত করতে কাঁচা কলার উপকারিতাঃ কাঁচা কলা হাড় শক্ত করতে সহায়তা করে। যদিও কলাতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম, তবুও এতে থাকা অন্যান্য উপাদান হাড়কে মজবুত করে। কলাতে প্রিবায়োটিক উপাদান রয়েছে, যা শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে হাড় সুস্থ ও শক্তিশালী থাকে। নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।

চুলের যত্নেঃ কাঁচা কলা চুলের যত্নে উপকারী। এতে কার্বোহাইড্রেট, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন-কে থাকে, যা চুলকে সুস্থ ও নরম রাখে, পুষ্টি যোগায় এবং ভেঙ্গে যাওয়া রোধ করে।


গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগে কাঁচা কলাঃ কাঁচা কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ্বরোগ, সংক্রামক ডায়রিয়া এবং কোলন ক্যান্সারের মতো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের প্রভাব কমাতে সহায়তা করে। এতে প্রচুর ফাইবার এবং স্টার্চ থাকে, যা এই রোগগুলির প্রভাব কমাতে উপকারী।

হজমশক্তি বাড়াতে কাঁচা কলাঃ কাঁচা কলা হজমশক্তি বাড়াতে কার্যকর। এতে প্রচুর ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ থাকে, যা পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়া, এটি পেটের বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধেও সহায়ক।

সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা হতে পারে। কাঁচা কলাতে থাকা প্রতিরোধী স্টার্চ এবং ফাইবার রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক গুণ ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে উপকারী।

ত্বকের ব্রণের সমস্যা কমাতেঃ কাঁচা কলা ত্বকের জন্য উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মুখের বলিরেখা দূর করতে এবং ব্রণের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাঁচা কলা রাখুন এবং সুস্থ থাকুন।

কাঁচা কলার পুষ্টিগুন

কাঁচা কলা ফাইবার, প্রতিরোধী স্টার্চ, পটাশিয়াম, এবং ভিটামিন বি৬-এর সমৃদ্ধ উৎস। এই পুষ্টিগুলি হজমশক্তি উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। তাছাড়া, কাঁচা কলা ত্বক ও চুলের জন্যও উপকারী। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ একটি ছকের মাধ্যমে নিচে তুলে ধরা হলঃ

পুষ্টি উপাদান প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমান
জল ৭৪.৯১ গ্রাম
শক্তি ৮৯ কিলোক্যালরি
প্রোটিন ১.০৯ গ্রাম
চর্বি ০.৩৩ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ২২.৮৪ গ্রাম
ফাইবার ২.৬ গ্রাম
চিনি ১২.২৩ গ্রাম
মাড় ৫ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.২৬ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ২২ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ৩৫৮ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
দস্তা ০.১৫ মিলিগ্রাম
তামা ০.০৭৮ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ ০.২৭ µg
সেলেনিয়াম ১ মাইক্রো গ্রাম
ফ্লোরাইড ২.২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ৮.৭ মিলিগ্রাম
থায়ামিন ০.০৩১ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন ০.০৭৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬ ০.৩৬৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই ০.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে 0.5 μg

উপরের ছকে কাচা কলার পুষ্টিগুণ সুন্দর ভাবে আলোচনা করা হল।

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা ও সতর্কতা

কলার পুষ্টিগুণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে সহায়ক। তবে, রাতে কলা খাওয়ার বিষয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং এর ফলে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

  • ঘুমের উন্নতি: যাদের ঘুমের সমস্যা আছে, তারা রাতে কলা খেলে ভালো ঘুম পেতে পারেন। কলাতে থাকা ট্রিপ্টোফ্যান নামক একটি উপাদান মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন উৎপাদন বাড়ায়, যা ঘুমের গুণমান উন্নত করে। রাতের খাবার পরে একটি কলা খেলে দ্রুত ঘুম আসতে সাহায্য করে।
  •  পেশী শিথিলতা: রাতে কলা খেলে পেশীর ব্যথা ও ক্লান্তি কমাতে সহায়ক হয়। কলাতে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা পেশী শিথিল করতে এবং ব্যথা দূর করতে সহায়ক।
  •  শক্তি বৃদ্ধি: রাতে কলা খাওয়া সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। কলাতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে যা শরীরে শক্তি প্রদান করে এবং শরীরকে সতেজ রাখতে সহায়ক।
  •  হজমশক্তি বৃদ্ধি: রাতে কলা খেলে হজমশক্তি বাড়ে। এতে থাকা ফাইবার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অম্বলের সমস্যা কমাতে সহায়ক।
  • ঠান্ডা এবং সর্দি-কাশি: কলাতে ঠান্ডা প্রভাব থাকে, তাই যাদের সর্দি, কাশি বা অ্যাজমার সমস্যা আছে তারা রাতে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এটি তাদের সমস্যা বাড়াতে পারে।
  •  ডায়াবেটিস ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা: যাদের ডায়াবেটিস আছে বা অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের রাতে কলা খাওয়া উচিত নয়। কলাতে থাকা শর্করা রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়াতে পারে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে।

রাতে কলা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যাদের বিশেষ শারীরিক সমস্যা নেই, তারা রাতে একটি কলা খেতে পারেন এবং এর উপকারিতা উপভোগ করতে পারেন। তবে যাদের ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, ডায়াবেটিস বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদের রাতের বেলা কলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ এবং সুস্থ থাকার জন্য সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কলার ক্ষতিকর দিক

কলার অনেক পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত কলা খাওয়া ওজন বৃদ্ধি, রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি, মাইগ্রেনের সমস্যা, পেট ফাঁপা, এবং হজমের সমস্যার কারণ হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত পটাশিয়াম গ্রহণের ফলে হৃদযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। তাই সুষম পরিমাণে কলা খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।কলা খাওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকরও হতে পারে। নিচে কলার কিছু সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করা হলোঃ

  • ওজন বৃদ্ধি: কলাতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষ করে যারা ডায়েটিং করছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত কলা খাওয়া উচিত নয়।

  • রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি: কলাতে প্রাকৃতিক শর্করা রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সীমিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত।

  • মাইগ্রেনের সমস্যা: কলাতে টায়ামিন নামক একটি উপাদান থাকে যা কিছু মানুষের মধ্যে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। মাইগ্রেনের রোগীদের জন্য কলা খাওয়া নিরুৎসাহিত করা হয়।

  • পেট ফাঁপা: অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণ করলে পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। কলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, তাই অতিরিক্ত কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

  • পটাশিয়াম অতিরিক্ততা: অতিরিক্ত পটাশিয়াম গ্রহণ করলে হাইপারক্যালিমিয়া নামক একটি অবস্থা হতে পারে যা হৃদযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত পটাশিয়াম গ্রহণ করা উচিত নয়।

  • হজমের সমস্যা: অতিরিক্ত কলা খাওয়া হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কলাতে প্রচুর ফাইবার থাকে যা বেশি পরিমাণে খেলে হজমের অসুবিধা হতে পারে।

কলার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি এবং এটি সাধারণত স্বাস্থ্যকর একটি ফল। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বা নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সুষম এবং পরিমিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা

আমরা জানি গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা কলা এই সময়ে খাদ্যতালিকায় যুক্ত করা একটি ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। কাঁচা কলা ফাইবার, ভিটামিন, এবং মিনারেলে সমৃদ্ধ, যা মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর উন্নয়নে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা, যা কাঁচা কলায় থাকা ফাইবারের মাধ্যমে কমানো যায়। এছাড়াও, এতে থাকা প্রতিরোধী স্টার্চ হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং পেটের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

কাঁচা কলা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি৬ মায়ের মেজাজ উন্নত করতে এবং ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক। এছাড়াও, কাঁচা কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং পেশির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

আরো পড়ুনঃ খালি পেটে আদার রস পান করার উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মায়ের সঠিক পুষ্টি শিশুর মস্তিষ্কের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা কলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের ফ্রি র‌্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, কাঁচা কলা প্রিবায়োটিক উপাদান ধারণ করে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

তবে গর্ভাবস্থায় যেকোনো খাদ্য গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়া মায়ের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শিশুর স্বাস্থ্যও ভালো রাখতে সহায়ক। তাই সঠিক পরিমাণে এবং সঠিকভাবে কাঁচা কলা খাওয়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী হতে পারে।

কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম

কাঁচা কলা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা অনেক পুষ্টিগুণ পেতে পারি। তবে সঠিকভাবে খেলে এর উপকারিতা বেশি লাভ করা সম্ভব। এখানে কাঁচা কলা খাওয়ার কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হলো:

  • সকালবেলা খালি পেটে: কাঁচা কলা খালি পেটে খাওয়া যায়। এটি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং দিনের শুরুতে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে।

  • সালাদে মিশিয়ে: কাঁচা কলা সালাদে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে অন্যান্য শাকসবজি এবং ফলমূলের সাথে মিশিয়ে খেলে স্বাদ এবং পুষ্টি উভয়ই বৃদ্ধি পায়।

  • সবজি হিসেবে রান্না করে: কাঁচা কলা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। এটি দেহে পুষ্টি যোগায় এবং সুস্বাদু হয়।

  • স্ন্যাক্স হিসেবে: কাঁচা কলা স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প এবং খিদে মেটাতে সাহায্য করে।

  • দৈনিক মাত্রা: দৈনিক ১-২টি কাঁচা কলা খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত খেলে বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

  • সঠিক প্রস্তুতি: কাঁচা কলা খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং প্রয়োজনে খোসা ছাড়িয়ে খেতে হবে।

  • বিভিন্ন ডিশে ব্যবহার: কাঁচা কলা বিভিন্ন ডিশে ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন, কারি, ভাজি বা চাটনি।

কাঁচা কলা খাওয়ার সময় এই নিয়মগুলো মেনে চললে এর পুষ্টিগুণ ভালোভাবে পাওয়া সম্ভব এবং এটি শরীরের জন্য উপকারী হবে।

দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত

কলা খাওয়ার গুনের যেন শেষ নেই। বিশেষজ্ঞরা দুধ ও ডিমের পর কলা খেতে বলেছেন। কলা আমাদের স্বাস্থ ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত কলা খেলে হার্টের সমস্যা ভালো হয় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির এক বড় উৎস হলো কলা। কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এটা সত্য, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। কলাও এর ব্যতিক্রম নয়। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কলা না খেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রতিদিন কতটি কলা খাওয়া উচিতঃ প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুটি কলা খাওয়া ভালো। দুটি কলা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে খুব বড় কলা দুটি খাওয়া উচিত নয়। কলা যদি খুব বড় হয়, তাহলে একটি, মাঝারি কলা হলে দুটি, এবং ছোট কলা হলে তিনটি করে দৈনিক খেতে পারেন। সাধারণত সকালে অথবা বিকেলে কলা খাওয়া উচিত। তবে খুব ভরা পেটে কলা খাওয়া ঠিক নয়।

নিয়ম মেনে কলা খাওয়াঃ নিয়মের মধ্যে কলা খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত কলা খেলে শরীরে বিভিন্ন পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই দৈনিক নিয়ম করে কলা খাওয়া উচিত, যাতে এর উপকারিতা পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যায়।

আমাদের শেষকথা

আজকের এই ব্লগে আমরা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, পাশাপাশি কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী এবং কখন এটি ক্ষতিকর হতে পারে, সে সম্পর্কে সবকিছু জানানো হয়েছে।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাইতানহিয়াত আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url